📰 সাংবাদিকরা কেন আজ নির্যাতনের শিকার?
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আজ একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা, দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরা সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলেও বাস্তবতায় তারাই বারবার নির্যাতন, হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বড় কারণ সামনে আসে।
সাংবাদিকদের মধ্যে একতার অভাবঃ
সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের অভাব। কেউ টিভি চ্যানেলে কাজ করলে নিজেকে উচ্চ মর্যাদার মনে করেন, আবার স্থানীয় বা প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ছোট করে দেখেন। এই বৈষম্য বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং সাংবাদিকদের সম্মিলিতভাবে নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে দুর্বল করছে।
আজ পর্যন্ত সাংবাদিকদের জন্য কোনো কার্যকর ও সুস্পষ্ট সরকারি নীতিমালা গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রকৃত সাংবাদিকরা সুরক্ষা পান না। নীতিমালার অভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে যারা মাঠপর্যায়ে সত্য প্রকাশে কাজ করেন, তারাই বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।
দুর্নীতি ও আইনের শাসনের অভাবঃ
দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আইনের শাসনের অভাব বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। দেখা যাচ্ছে, সিএনজি ড্রাইভার, মাদক ব্যবসায়ী, দালালসহ বিভিন্ন অযোগ্য ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত লোকজন টাকার জোরে ভুয়া আইডি কার্ড নিয়ে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় নিচ্ছে। এতে প্রকৃত সাংবাদিকদের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সমাজে সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা নষ্ট হচ্ছে।
সাংবাদিকদের কেন পুলিশ হতে লাঞ্ছিত হতে হয়?
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হওয়ার কথা পুলিশের। তাদের দায়িত্ব নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বারবার দেখা যাচ্ছে—পুলিশই সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে বা মাঠে সংবাদ সংগ্রহ করতে বাধা দিচ্ছে।
এখানে বড় প্রশ্ন হলো—
👉 রাষ্ট্র কি পুলিশকে সাংবাদিকদের অপমান করার ক্ষমতা দিয়েছে?
👉 সাংবাদিকরা কি নাগরিক নন?
👉 যারা সত্য প্রকাশ করেন, তাদের বারবার কেন টার্গেট করা হচ্ছে?
এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে হবে ক্ষমতাসীনদের। কারণ সাংবাদিকরা নিরাপদ না হলে জনগণের কণ্ঠস্বরও নিরাপদ থাকবে না।
প্রকৃত সাংবাদিকতার শর্তঃ
সাংবাদিকতা কোনো সাধারণ কাজ নয়। এখানে যোগ্যতা, নৈতিকতা ও সাহস অপরিহার্য।
📌 প্রকৃত সাংবাদিক হতে হলে—
✔️ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে
✔️ পেশাগত দক্ষতা ও নৈতিকতা থাকতে হবে
✔️ সত্য প্রকাশের সাহস থাকতে হবে
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মানদণ্ডগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলাফল—যারা সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা করেন, তারাই আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতন, লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
উপসংহারঃ
সাংবাদিকতা রাষ্ট্র ও সমাজের আয়না। যদি সাংবাদিকরা নিরাপদ না থাকেন, তবে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তাই প্রয়োজন—
✔️ সাংবাদিকদের জন্য স্পষ্ট সরকারি নীতিমালা
✔️ ভুয়া সাংবাদিক কার্ড বন্ধ
✔️ সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য
✔️ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
✔️ পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত
👉 মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকরা বাঁচলে সত্য বাঁচবে, আর সত্য বাঁচলে সমাজ বাঁচবে।
লেখকঃ রাজু আহমেদ
#সাংবাদিকতা #সাংবাদিকনির্যাতন #সাংবাদিকঅধিকার #সাংবাদিকসংগঠন #ভুয়সাংবাদিক #আইনেরশাসন #পুলিশহয়রানি #PressFreedom #JournalistRights #StopHarassment #BangladeshJournalist #FreePress #TruthMatters

কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন